আওয়াবিনের নামাজ কি? কত রাকাত? ফজিলত ও আদায়ের পদ্ধতি কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্লেষন কর। লেখকঃ মোঃ ফিরোজ কবির।
আওয়াবিনের নামাজ হলো মাগরিবের ফরজ নামাজের পর আদায়কৃত একটি নফল ইবাদত, যা আল্লাহর কাছে নিকটবর্তী হওয়ার এবং বিশেষ নেকি অর্জনের জন্য পড়া হয়। "আওয়াবিন" শব্দটি আরবি থেকে এসেছে, যার অর্থ "পশ্চাৎপসারিত ব্যক্তি" বা "আল্লাহর প্রতি ফিরে আসা।"
কুরআনের আলোকে আওয়াবিন
আওয়াবিনের নামাজ সরাসরি কোনো কুরআনের আয়াতে উল্লেখ নেই। তবে আল্লাহ তায়ালা এমন ব্যক্তিদের প্রশংসা করেছেন, যারা নিয়মিত ইবাদত করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে:
“নিশ্চয়ই আমি তাকে (দাউদকে) পেয়েছি আমার প্রতি ফিরে আসা (আওয়াব)কারী।”
(সূরা সাদ: ১৭)
তাছাড়া, যারা বেশি নফল ইবাদত করে, তাদের আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ প্রতিদান দেওয়া হবে বলে কুরআনে উল্লেখ রয়েছে।
হাদিসের আলোকে আওয়াবিন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিভিন্ন হাদিসে আওয়াবিনের নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে।
১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়ে, তার জন্য বারো বছরের ইবাদতের সওয়াব লেখা হয়।”
(সুনান তিরমিজি: ৪৩৫)
২. এক বর্ণনায় এসেছে:
“মাগরিবের পরের নামাজই আওয়াবিনের নামাজ।”
(মুসনাদে আহমদ: ২৭৬৮৪)
আওয়াবিনের নামাজের রাকাত সংখ্যা
আওয়াবিনের নামাজ সাধারণত ৬ রাকাত নফল নামাজ। তবে কেউ কমপক্ষে ২ রাকাত পড়লেও এটি আওয়াবিনের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
ফজিলত
- গুনাহ মাফ: আওয়াবিনের নামাজ মানুষের ছোটখাটো গুনাহ মাফ করে দেয়।
- অতিরিক্ত নেকি অর্জন: এটি নফল ইবাদতের মধ্যে অন্যতম সেরা ইবাদত, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের বড় মাধ্যম।
- জান্নাতের প্রতিদান: নিয়মিত আওয়াবিন আদায়কারীদের জন্য আল্লাহ জান্নাতের বিশেষ মর্যাদা রাখেন।
- বারো বছরের সওয়াব: মাগরিবের পর ছয় রাকাত নফল পড়লে বারো বছরের ইবাদতের সমান সওয়াব অর্জিত হয়।
আদায়ের পদ্ধতি
সময়:
- আওয়াবিনের নামাজ মাগরিবের ফরজ ও সুন্নত নামাজের পরে আদায় করা হয়।
- ইশার আগ পর্যন্ত এটি আদায় করা যায়।
রাকাত:
- সাধারণত ৬ রাকাত পড়া হয়।
- কেউ ইচ্ছা করলে কমপক্ষে ২ বা ৪ রাকাতও পড়তে পারেন।
নিয়ত:
- নফল ইবাদতের জন্য আলাদা কোনো নির্দিষ্ট নিয়ত নেই। মনে মনে আওয়াবিনের জন্য ইবাদতের নিয়ত করলেই যথেষ্ট।
পাঠ:
- প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং অন্য কোনো সূরা পড়তে হয়।
খুশু-খুজু বজায় রাখা:
- নামাজে মনোযোগ ও আল্লাহর প্রতি বিনম্রতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
আওয়াবিনের নামাজ একটি উত্তম নফল ইবাদত, যা মুমিনদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের দারুণ সুযোগ। এটি নিয়মিত আদায়ের মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা এবং জান্নাতের মর্যাদা লাভ করতে পারে।
আপনার প্রশ্নের বিষয়ের উপর মোঃ ফিরোজ কবিরের লেখা থেকে আরো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
Comments
Post a Comment