সালাতুল কুদুম বা কুদুম সালাত কি? কত রাকাত? ফজিলত ও আদায়ের পদ্ধতি কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্লেষন কর। লেখকঃ মোঃ ফিরোজ কবির।

সালাতুল কুদুম বা কুদুম সালাত একটি নফল নামাজ, যা কোন জায়গায় সফর শেষে পৌঁছানোর পর শুকরিয়া আদায়ের জন্য পড়া হয়। এটি ইসলামী ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের থেকে অনুপ্রাণিত।

রাকাত সংখ্যা

সালাতুল কুদুম সাধারণত ২ রাকাত নফল নামাজ। তবে এটি নফল হওয়ায় ইচ্ছা অনুযায়ী রাকাত সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।


ফজিলত

সালাতুল কুদুমের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে সরাসরি কিছু উল্লেখ না থাকলেও নিম্নলিখিত কারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়:

  1. আল্লাহর শুকরিয়া আদায়: সফরের কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

    • কুরআনে বলা হয়েছে:

      "যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে আমি তোমাদের জন্য আরো বেশি করব।"
      — (সুরা ইবরাহিম, ১৪:৭)

  2. নবীজির সুন্নত অনুসরণ: রাসূল (সা.) বিভিন্ন সফর থেকে ফিরে এসে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতেন।

    • আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত:

      "যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো সফর থেকে ফিরে আসতেন, তিনি মসজিদে প্রবেশ করতেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন।"
      — (সহীহ বুখারি: ৩০৮৮)

  3. আল্লাহর নৈকট্য লাভ: সফরকারীর দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়।


আদায়ের পদ্ধতি

সালাতুল কুদুম আদায়ের জন্য বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। তবে সাধারণ নফল নামাজের নিয়ম মেনে আদায় করা হয়:

  1. নিয়ত করুন: মনে মনে বা মুখে বলুন, "আমি সালাতুল কুদুমের জন্য ২ রাকাত নামাজ পড়ছি আল্লাহর জন্য।"

  2. সফর শেষে বা গন্তব্যে পৌঁছে মসজিদে পড়া উত্তম। যদি মসজিদে না সম্ভব হয়, তবে যে কোনো পরিষ্কার স্থানে পড়তে পারেন।

  3. কোরআনের গুরুত্বপূর্ণ সূরা পড়া: নামাজে সুরা ফাতিহার পরে ছোট সূরা যেমন সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস ইত্যাদি পড়া যায়।

  4. দোয়া করুন: নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করুন এবং সফরের কল্যাণ কামনা করুন।


উপসংহার

সালাতুল কুদুম আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত পালনের একটি উত্তম মাধ্যম। এটি পড়লে মুমিনের মনে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা বৃদ্ধি পায় এবং তার সফরের বরকত লাভ হয়। নিয়মিত এ অভ্যাস গড়ে তোলা একজন মুমিনের জন্য আত্মিক উন্নতির কারণ হতে পারে।

Comments

Popular posts from this blog

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শৈশব ও কৈশোর শৈশবকাল। লেখক মোঃ ফিরোজ কবির।

বিষয়ঃ বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে রাসুল (সা:) এর আদর্শ। লেখক মোঃ ফিরোজ কবির

হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর স্ত্রীদের নামসমূহ। লেখক- মোঃ ফিরোজ কবির।