সালাতুল ইস্তিখারা নামাজ কি? কত রাকাত? ফজিলত ও আদায়ের পদ্ধতি কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্লেষন কর। লেখকঃ মোঃ ফিরোজ কবির।
সালাতুল ইস্তিখারা: কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ
সালাতুল ইস্তিখারা হলো কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আল্লাহর কাছে দিকনির্দেশনা ও কল্যাণ প্রার্থনার উদ্দেশ্যে পড়া বিশেষ নফল নামাজ। এটি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বারা শেখানো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মুসলমানদের জন্য যেকোনো কাজ সহজ ও কল্যাণময় করতে আল্লাহর সাহায্য কামনার উপায়।
কুরআনের আলোকে ইস্তিখারা
কুরআনে ইস্তিখারার নামাজের সরাসরি উল্লেখ নেই, তবে বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার গুরুত্ব ও তাঁর উপর ভরসার কথা বলা হয়েছে।
1. সুরা আল-ইমরান:
আল্লাহ বলেন,
> "তোমরা যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো, তখন আল্লাহর উপর ভরসা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ভরসাকারীদের ভালোবাসেন।"
(সুরা আল-ইমরান: ১৫৯)
2. সুরা আল-বাকারাহ:
আল্লাহ বলেন,
> "তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।"
(সুরা আল-বাকারাহ: ১৫৩)
এই আয়াতগুলো ইস্তিখারার মূল ভিত্তি, যা ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর দিকনির্দেশনা ও সাহায্য প্রার্থনার প্রতি উৎসাহিত করে।
হাদিসের আলোকে ইস্তিখারা
ইস্তিখারা নামাজ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যা মুসলমানদের জীবনে এ ইবাদতের গুরুত্ব প্রকাশ করে।
1. ইস্তিখারা নামাজ শেখানোর পদ্ধতি:
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত:
> "রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সব বিষয়ে ইস্তিখারা করতে এমনভাবে শিক্ষা দিতেন, যেভাবে তিনি কুরআনের কোনো সূরা শেখাতেন। তিনি বলতেন: 'যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজের বিষয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়, তখন সে ফরজ নামাজ ছাড়া দু’ রাকাত নফল নামাজ পড়বে এবং এই দোয়া করবে।'"
(সহিহ বুখারি: ১১৬৬)
2. ইস্তিখারার দোয়া:
ইস্তিখারা নামাজের পর এই বিশেষ দোয়া পড়তে হয়:
> "আল্লাহুম্মা ইন্নি আসতাখীরুকা বিআলমিকা, ওয়া আসতাকদিরুকা বিকুদরাতিকা, ওয়া আসআলুকা মিন ফাদলিকাল আযিম..."
(অর্থ: হে আল্লাহ, আমি তোমার জ্ঞান অনুযায়ী কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং তোমার ক্ষমতার মাধ্যমে শক্তি কামনা করছি। তোমার মহান অনুগ্রহ কামনা করছি...)
(সহিহ বুখারি: ১১৬২)
3. ইস্তিখারার ফলাফল:
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইস্তিখারা করার পর মানুষকে আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে বলেছেন। দোয়ার মাধ্যমে হৃদয়ে একটি শান্তি অনুভূত হয়, যা আল্লাহর নির্দেশনার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে।
ইস্তিখারা নামাজের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব
1. আল্লাহর নির্দেশনা প্রার্থনা:
ইস্তিখারা মানুষকে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হওয়ার শিক্ষা দেয়।
2. কল্যাণ লাভ ও ক্ষতি থেকে বাঁচা:
ইস্তিখারার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করা হয় এবং ক্ষতিকর বিষয় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
3. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বৃদ্ধি:
ইস্তিখারা মানুষকে সবসময় আল্লাহর উপর নির্ভরশীল রাখে।
ইস্তিখারা নামাজের আদায় পদ্ধতি
1. নিয়ত:
ইস্তিখারার নিয়ত করে দু' রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়।
2. রাকাত সংখ্যা:
সাধারণত ২ রাকাত। তবে বেশি পড়লেও কোনো অসুবিধা নেই।
3. ইস্তিখারা দোয়া:
নামাজ শেষে সালাম ফিরিয়ে ইস্তিখারার দোয়া পাঠ করতে হয়।
4. পরবর্তী ধাপ:
ইস্তিখারার পর নিজের অন্তরে শান্তি অনুভব করলে বা কাজের জন্য অনুপ্রাণিত হলে তা আল্লাহর নির্দেশনা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
ইস্তিখারা সম্পর্কে সাধারণ ভুল ধারণা
1. স্বপ্নে ফলাফল আশা করা:
অনেকেই মনে করেন, ইস্তিখারার পর স্বপ্নে কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যাবে। তবে হাদিসে স্বপ্নের উল্লেখ নেই। ইস্তিখারা করার পর অন্তরে শান্তি অনুভব বা কাজের প্রতি ঝোঁক আল্লাহর পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা হতে পারে।
2. শুধু বড় বিষয়ের জন্য করা:
ইস্তিখারা ছোট-বড় সব বিষয়ে করা যায়। হাদিসে রাসুল (সা.) সাহাবিদের প্রতিটি বিষয়ে ইস্তিখারা করার শিক্ষা দিয়েছেন।
উপসংহার
সালাতুল ইস্তিখারা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কুরআন ও হাদিসের আলোকে এটি মানুষের জীবনে বরকত এবং কল্যাণ বয়ে আনে। ইস্তিখারার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করতে শিখে এবং জীবনের সঠিক পথ বেছে নিতে সক্ষম হয়। মুসলিমদের উচিত, যেকোনো বিষয়ে ইস্তিখারা করে আল্লাহর দিকনির্দেশনা অনুসরণ করা।
Comments
Post a Comment