ইসলামে নারীর মর্যাদা কুরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা কর। লেখক মোঃ ফিরোজ কবির।

ইসলামে নারীর মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ এবং তা কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত। ইসলামের শিক্ষা অনুসারে নারী-পুরুষ উভয়েই আল্লাহর সৃষ্টি এবং তাঁদের জন্য সমান মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এখানে কুরআন এবং হাদিসের আলোকে নারীর মর্যাদা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:


কুরআনের আলোকে নারীর মর্যাদা

  1. সমান সৃষ্টি
    কুরআনে আল্লাহ বলেছেন:

    "হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদের একক প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন।"
    (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১)

    • এই আয়াতে নারী ও পুরুষের সমান সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।
  2. সমান আধ্যাত্মিক মর্যাদা
    কুরআনে নারী-পুরুষের জন্য একই আধ্যাত্মিক পুরস্কারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে:

    "নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ এবং মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারী... তাদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা এবং মহান পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন।"
    (সূরা আহযাব, আয়াত ৩৫)

  3. মাতৃত্বের গুরুত্ব
    সন্তান জন্মদান এবং লালন-পালনে নারীর অবদানকে কুরআনে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে:

    "আমরা মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং তার দুধ ছাড়ানোর সময় দুই বছর।"
    (সূরা লুকমান, আয়াত ১৪)

  4. শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের অধিকার
    কুরআনে শিক্ষা অর্জনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য তা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

  5. অধিকার ও দায়িত্ব
    ইসলামে নারীর অর্থনৈতিক অধিকার স্পষ্ট:

    "পুরুষদের যা অর্জন, তা তাদের জন্য, আর নারীদের যা অর্জন, তা তাদের জন্য।"
    (সূরা আন-নিসা, আয়াত ৩২)
    নারীরা নিজস্ব সম্পত্তি রাখতে, ব্যবসা করতে এবং উত্তরাধিকার পেতে পারে।


হাদিসের আলোকে নারীর মর্যাদা

  1. মায়ের মর্যাদা
    হাদিসে নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:

    "এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমার ওপর সবচেয়ে বেশি অধিকার কার?’ রাসূল (সা.) বললেন, ‘তোমার মায়ের।’ এরপর তিনবার একই প্রশ্ন করলে তিনবারই ‘মা’ বললেন এবং চতুর্থবার ‘তোমার বাবা’ বললেন।"
    (সহীহ বুখারি, হাদিস ৫৯৭১)

  2. স্ত্রী হিসেবে নারীর মর্যাদা
    নবী করিম (সা.) বলেছেন:

    "তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে তার পরিবারের প্রতি উত্তম।"
    (তিরমিজি, হাদিস ৩৮৯৫)

  3. নারীদের প্রতি সদাচরণ
    নবী করিম (সা.) বিদায় হজে ঘোষণা করেছিলেন:

    "নারীদের সাথে উত্তম আচরণ করো।"
    (সহীহ মুসলিম, হাদিস ১৪৬৮)

  4. কন্যা সন্তানের গুরুত্ব
    নবী (সা.) বলেছেন:

    "যে ব্যক্তি দুই বা তিনটি কন্যা সন্তানকে ভালোভাবে লালন-পালন করবে, তাকে জান্নাত দান করা হবে।"
    (তিরমিজি, হাদিস ১৯১২)

  5. শিক্ষার বাধ্যবাধকতা
    নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:

    "জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর ওপর ফরজ।"
    (ইবনে মাজাহ, হাদিস ২২৪)


ইসলামে নারীর অধিকার

  1. বিবাহের স্বাধীনতা
    নারীর সম্মতি ছাড়া বিবাহ বৈধ নয়। নবী করিম (সা.) বলেছেন:

    "বিবাহে নারীর অনুমতি অপরিহার্য।" (সহীহ বুখারি)

  2. অর্থনৈতিক অধিকার
    নারী উত্তরাধিকার পায় এবং নিজের সম্পত্তি ব্যবহারে স্বাধীন।

  3. সমাজে ভূমিকা
    ইসলামে নারীরা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে।


উপসংহার

ইসলাম নারীর জন্য ব্যক্তিগত, পারিবারিক, এবং সামাজিক জীবনে সম্মান, মর্যাদা এবং অধিকার নিশ্চিত করেছে। কুরআন ও হাদিসে নারীর প্রতি সদাচরণ, তাদের শিক্ষা, এবং ন্যায্য অধিকারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইসলাম নারীদের মর্যাদা এমন পর্যায়ে উন্নীত করেছে যা অন্য কোনো সংস্কৃতিতে বিরল।

Comments

Popular posts from this blog

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শৈশব ও কৈশোর শৈশবকাল। লেখক মোঃ ফিরোজ কবির।

বিষয়ঃ বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে রাসুল (সা:) এর আদর্শ। লেখক মোঃ ফিরোজ কবির

হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর স্ত্রীদের নামসমূহ। লেখক- মোঃ ফিরোজ কবির।