কুরআন ও হাদিসে পাত্রী নির্বাচনের বিষয়ে কি বলা হয়েছে। লেখক- মোঃ ফিরোজ কবির।

 ইসলামে পাত্রী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, কারণ এটি ভবিষ্যত জীবন, পরিবারের শান্তি, এবং দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করে। কোরআন ও হাদিসে পাত্রী নির্বাচনের বিষয়ে কিছু বিশেষ দিক নির্দেশনা রয়েছে, যা একজন মুসলিম পুরুষের জন্য দিকনির্দেশক হতে পারে।

কোরআনে পাত্রী নির্বাচনের নির্দেশনা:

১. ঈমান ও ধর্মীয় বিশ্বাস:
কোরআনে সাফভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একজন মুসলিম পুরুষকে তার বিবাহের জন্য এমন নারী নির্বাচন করতে হবে যে ঈমানী এবং ধর্মীয় নীতিতে দৃঢ়।

  • সূরা আল-বাকারাহ (2:221):
    "তোমরা মুশরিক নারীদেরকে (তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী) বিয়ে করতে পারো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনবে। একজন মুশরিক নারী, মুসলিম নারী থেকে ভালো নয়, যদিও সে তোমাদের কাছে কতই না ভালো লাগে।"
    এই আয়াতের মাধ্যমে বলা হয়েছে যে, একজন মুসলিম নারী বা পুরুষের সাথে বিয়ে করা উচিত যাদের ঈমান ও ধর্মীয় মূল্যবোধ একই রকম।

২. ভালো চরিত্র ও নৈতিকতা:
কোরআনে চরিত্র এবং নৈতিকতার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা একজন পাত্রী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দিক।

  • সূরা আলে-ইমরান (3:195):
    "তোমরা যা খরচ কর, তার পরিণতি পাবে, এবং তোমরা যা কাজ কর, তা থেকে তোমাদের পুরস্কৃত করা হবে।" এই আয়াতের মাধ্যমে বলা হয়েছে যে, একজন মেয়ে যে দৃষ্টিভঙ্গি ও চরিত্রে বড় হচ্ছে তা বিবেচনায় আনা উচিত, কারণ তার আচরণ ও কর্মকাণ্ড ভবিষ্যত জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

হাদিসে পাত্রী নির্বাচনের নির্দেশনা:

১. ভালো চরিত্র, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সৌন্দর্য এবং বংশ:
নবী মুহাম্মদ (সাঃ) পাত্রী নির্বাচন সম্পর্কে বলেন:

  • হাদিস (সহীহ মুসলিম):
    "তুমি যার সঙ্গে বিয়ে করতে যাচ্ছো, তার ধর্ম, চরিত্র এবং সৎবাসের দিকে নজর দাও। বিয়ে করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সেই নারীর ধর্ম।"
    নবী (সাঃ) বলেছেন যে, ধর্মের সাথে সাথে একজন নারীর চরিত্রও মূল্যবান। সৌন্দর্য ও ধন-সম্পদও গুরুত্বপূর্ণ, তবে সেগুলি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে।

২. ধর্ম ও নৈতিকতার পক্ষে জোর:

  • হাদিস (সহীহ বুখারি):
    "ধর্মী এবং সৎ চরিত্রের নারীই সবচেয়ে ভালো জীবনসঙ্গী।"
    এই হাদিসের মাধ্যমে নবী (সাঃ) প্রস্তাব করেন যে, পাত্রী নির্বাচনে প্রথমে তার ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং নৈতিকতার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

৩. ধন-সম্পদ ও সৌন্দর্য:

  • হাদিস (সহীহ মুসলিম):
    "দেখো, একজন পুরুষ যে নারীর সঙ্গে বিয়ে করতে চায়, সে তার সৌন্দর্য, ধনসম্পদ, বংশ পরিচয় এবং ধর্মের দিকগুলো বিবেচনা করবে। তবে, তোমরা ধর্মের দিকটি চাও।"
    এই হাদিসে বলা হয়েছে, সৌন্দর্য ও ধনসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ হলেও, ইসলামে একমাত্র ধর্ম এবং চরিত্র বেশি মূল্যবান।

সারসংক্ষেপ:

ইসলামে পাত্রী নির্বাচনের সময় প্রথমত ধর্মীয় বিশ্বাস এবং চরিত্রের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়। কোরআন ও হাদিসে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, একজন মুসলিম পুরুষকে এমন নারী বেছে নিতে হবে, যিনি ধর্মী, সৎ, এবং চরিত্রবান। সৌন্দর্য, ধনসম্পদ এবং বংশ পরিচয় অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং নৈতিক চরিত্রের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।

এই পরামর্শগুলি ইসলামে দাম্পত্য জীবনের সফলতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য।

Comments

Popular posts from this blog

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শৈশব ও কৈশোর শৈশবকাল। লেখক মোঃ ফিরোজ কবির।

বিষয়ঃ বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে রাসুল (সা:) এর আদর্শ। লেখক মোঃ ফিরোজ কবির

হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর স্ত্রীদের নামসমূহ। লেখক- মোঃ ফিরোজ কবির।