মোবাইল ফোনের প্রভাব কি শিশুদের ওপর পড়তে পারে? লেখক - মোঃ ফিরোজ কবির।
- Get link
- X
- Other Apps
মোবাইল ফোনের প্রভাব কি শিশুদের ওপর পড়তে পারে?
হ্যাঁ, মোবাইল ফোনের প্রভাব শিশুদের ওপর পড়তে পারে, এবং এটি শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, শিক্ষাগত ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব দেওয়া হলো:
১. শারীরিক প্রভাব:
দৃষ্টিশক্তি সমস্যা:
মোবাইল ফোনের স্ক্রীনে দীর্ঘ সময় দেখার কারণে শিশুদের চোখে চাপ পড়ে, যা দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে দিতে পারে। এতে চোখে জ্বালা, চোখ শুকিয়ে যাওয়া এবং ঝাপসা দেখা হতে পারে।ঘুমের সমস্যা:
মোবাইল ফোনের নীল আলো (Blue Light) মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন বাধা দেয়, যা ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয়। এর ফলে শিশুদের ঘুমের সমস্যা হতে পারে এবং দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে সঠিক পরিমাণে ঘুম না হওয়া শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।পোস্টুরাল সমস্যা:
মোবাইল ফোনে দীর্ঘ সময় সময় কাটানোর ফলে শিশুদের শরীরের পজিশন ভুল হয়ে যেতে পারে, যার ফলে পিঠ, ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা হতে পারে। সঠিকভাবে বসে না থাকার কারণে শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
২. মানসিক প্রভাব:
অবসাদ ও উদ্বেগ:
অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার শিশুদের মধ্যে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন নেতিবাচক তথ্য বা সাইবার বুলিংয়ের কারণে তাদের মানসিক অবস্থা খারাপ হতে পারে এবং তারা অবসাদ বা একাকিত্বের শিকার হতে পারে।আসক্তি:
মোবাইল ফোনে গেম খেলা, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, ভিডিও দেখা ইত্যাদি শিশুদের আসক্তি তৈরি করতে পারে। এটি তাদের সময় ও মনোযোগকে বিভ্রান্ত করে এবং পড়াশোনা বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রতি তাদের মনোযোগ কমিয়ে দেয়।
৩. সামাজিক প্রভাব:
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা:
মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুদের বাস্তব জীবনের সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তারা মুখোমুখি কথা বলার পরিবর্তে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে, যার ফলে একাকিত্ব এবং সামাজিক দক্ষতার অভাব হতে পারে।সামাজিক সম্পর্কের দুর্বলতা:
শিশুদের মাঝে বাস্তব জীবনে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগের চেয়ে মোবাইলে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বেশি হয়ে যেতে পারে, যা তাদের সম্পর্কের গভীরতা কমিয়ে দিতে পারে।
৪. শিক্ষাগত প্রভাব:
অমনোযোগিতা:
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গেম খেলা বা ভিডিও দেখা শিশুর পড়াশোনায় মনোযোগ কমিয়ে দিতে পারে। এটি তাদের একাডেমিক পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে এবং তাদের শিক্ষাগত উন্নতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।শিক্ষা ও আগ্রহের প্রতি উদাসীনতা:
শিশুদের মাঝে মোবাইল ফোনের আসক্তি তাদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে। এতে তারা বাইরের খেলাধুলা, বই পড়া বা অন্যান্য শিক্ষামূলক কার্যকলাপে আগ্রহী হতে পারে না।
৫. নিরাপত্তা ঝুঁকি:
সাইবার বুলিং:
শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে সাইবার বুলিং বা অনলাইনে হেনস্তার শিকার হতে পারে। এটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিতে পারে।অনলাইন নিরাপত্তা:
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিশুদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করা বা ভুলে অপরিচিত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এ কারণে শিশুরা অনলাইনে বিভ্রান্তিকর বা ক্ষতিকর বিষয়েও প্রবেশ করতে পারে।
৬. শখ ও আগ্রহের বিকাশে বাধা:
মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুদের অন্যান্য শখ বা আগ্রহের বিকাশে বাধা দিতে পারে, যেমন খেলাধুলা, বই পড়া, বা প্রকৃতির সাথে সময় কাটানো। মোবাইল ফোনের আসক্তি তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
সারাংশ:
মোবাইল ফোন শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং শিক্ষাগত জীবনে বিভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারে। তাই শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করা এবং সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করা অত্যন্ত জরুরি। শিশুদের জন্য মোবাইল ফোনের ব্যবহার সীমিত করা, সময়সীমা নির্ধারণ করা এবং তাদের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখা উচিত।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment