তাহাজ্জুদের নামাজ কি? কত রাকাত? ফজিলত ও আদায়ের পদ্ধতি কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্লেষন কর। লেখকঃ মোঃ ফিরোজ কবির।
তাহাজ্জুদ নামাজ হলো রাতের বিশেষ সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া ও ইবাদতের জন্য আদায়কৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত। এটি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিয়মিত অভ্যাস ছিল এবং উম্মতের জন্য বিশেষ বরকতপূর্ণ আমল।
কুরআনের আলোকে তাহাজ্জুদ নামাজ
1. সুরা আল-মুজাম্মিল:
আল্লাহ বলেন,
> "হে ঢেকে নেওয়া ব্যক্তি, রাত জাগো কিছু সময়, অর্ধেক রাত বা তার কিছু কম বা বেশি এবং কোরআন স্পষ্ট উচ্চারণে তেলাওয়াত করো।"
(সুরা মুজাম্মিল: ১-৪)
এই আয়াতে রাতের ইবাদতের (তাহাজ্জুদ) গুরুত্ব ফুটে উঠেছে।
2. সুরা আল-ইসরা:
আল্লাহ বলেন,
> "রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ো, এটি তোমার জন্য নফল, যাতে তোমার প্রভু তোমাকে প্রশংসিত স্থানে উন্নীত করেন।"
(সুরা আল-ইসরা: ৭৯)
এই আয়াতে রাতের নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং মর্যাদা বৃদ্ধির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
3. সুরা আল-ফুরকান:
আল্লাহ বলেন,
> "আর যারা তাদের প্রভুর জন্য সিজদা ও দাঁড়ানো অবস্থায় রাত কাটায়।"
(সুরা আল-ফুরকান: ৬৪)
এই আয়াত রাত জেগে ইবাদতকারীদের প্রশংসা করেছে।
হাদিসের আলোকে তাহাজ্জুদ নামাজ
1. রাসুলুল্লাহ (সা.) এর অভ্যাস:
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন এবং এটি তাঁর জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।
হযরত আয়েশা (রা.) বলেন,
"রাসুলুল্লাহ (সা.) এত দীর্ঘ সময় তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন যে তাঁর পা ফুলে যেত। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো নিষ্পাপ, এত কষ্ট কেন? তিনি বললেন, 'আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে পারি না?'"
(সহিহ বুখারি: ১১৩০; সহিহ মুসলিম: ২৮১৯)
2. রাতের নামাজের মর্যাদা:
রাসুল (সা.) বলেন,
"ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ।"
(সহিহ মুসলিম: ১১৬৩)
3. তাহাজ্জুদের সময়:
রাসুল (সা.) বলেন,
"আমাদের প্রভু প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, 'কোনো প্রার্থনাকারী আছে কি, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি, আমি তাকে ক্ষমা করব?'"
(সহিহ বুখারি: ১১৪৫; সহিহ মুসলিম: ৭৫৮)
4. তাহাজ্জুদের রাকাত সংখ্যা:
রাসুল (সা.) সাধারণত ১১ রাকাত (৮ রাকাত তাহাজ্জুদ এবং ৩ রাকাত বিতর) পড়তেন। তবে কম বা বেশি পড়াও বৈধ।
হযরত আয়েশা (রা.) বলেন,
"রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান ও রমজান ব্যতীত ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না।"
(সহিহ বুখারি: ১১৪৭)
তাহাজ্জুদের ফজিলত
1. জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা:
রাসুল (সা.) বলেন,
"জান্নাতে বিশেষ ঘর রয়েছে, যার ভেতর থেকে বাইরের অংশ এবং বাইরের অংশ থেকে ভেতর দেখা যায়। এটি তাদের জন্য, যারা রাতে নামাজ পড়ে।"
(তিরমিজি: ২৫৪৫)
2. গুনাহ মাফ ও দোয়া কবুল:
রাতের শেষভাগে দোয়া কবুল হওয়ার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
3. আল্লাহর নৈকট্য অর্জন:
তাহাজ্জুদ ইবাদত আল্লাহর প্রিয় আমলগুলোর একটি। এটি বান্দাকে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়।
তাহাজ্জুদের আদায় পদ্ধতি
1. অল্প সময় ঘুমানোর পর রাতে উঠে অজু করা।
2. সর্বনিম্ন ২ রাকাত এবং সর্বোচ্চ ৮ রাকাত বা ১১ রাকাত নামাজ আদায় করা।
3. নামাজে দীর্ঘ কিরাত এবং সিজদায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
উপসংহার
তাহাজ্জুদ নামাজ কুরআন ও হাদিসের আলোকে একটি মহৎ ইবাদত, যা বান্দার ঈমান, তাকওয়া ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বাড়ায়। এটি নিয়মিত আদায় করা আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম।
Comments
Post a Comment