চাশতের নামাজ কি? কত রাকাত? ফজিলত ও আদায়ের পদ্ধতি কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্লেষন কর। লেখকঃ মোঃ ফিরোজ কবির।
চাশতের নামাজ (দোহা নামাজ) হলো দিনের প্রথমভাগে (সকাল) আদায় করা একটি নফল ইবাদত। এটি ইসলামি ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ এবং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অত্যন্ত প্রিয় আমলগুলোর একটি।
কুরআনের আলোকে চাশতের নামাজ
চাশতের নামাজ সম্পর্কে কুরআনে সরাসরি কোনো উল্লেখ নেই। তবে কুরআনের কয়েকটি আয়াত দিনের নির্দিষ্ট সময়ে ইবাদতের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছে, যা চাশতের নামাজকে অন্তর্ভুক্ত করে।
1. সুরা আয-জারিয়াত:
আল্লাহ বলেন,
> "তারা রাতের কিছু অংশ ঘুমায় এবং ভোরবেলায় ক্ষমা প্রার্থনা করে।"
(সুরা আয-জারিয়াত: ১৭-১৮)
2. সুরা তোহা:
> "সকালবেলায় এবং বিকেলে তোমার প্রভুর নাম স্মরণ করো।"
(সুরা তোহা: ১৩০)
হাদিসের আলোকে চাশতের নামাজ
চাশতের নামাজ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একাধিক হাদিস রয়েছে, যা এর ফজিলত ও গুরুত্ব নির্দেশ করে।
1. চাশতের ফজিলত:
রাসুল (সা.) বলেন,
> "মানুষের ৩৬০টি অস্থির জন্য প্রতিদিন দান করা প্রয়োজন। আল্লাহর প্রশংসা করা, তাঁর তাসবিহ বলা, আল্লাহর একত্বের স্বীকৃতি দেওয়া এবং ভালো কাজের নির্দেশনা দেওয়া সবই সদকা। আর চাশতের দুই রাকাত নামাজ এই সব কিছুর প্রতিস্থাপন হয়।"
(সহিহ মুসলিম: ৭২০)
2. চাশতের সময় ও নিয়মিত আমল:
আবু হুরাইরা (রা.) বলেন,
> "আমার বন্ধু (রাসুল সা.) আমাকে তিনটি বিষয়ে وصية (উপদেশ) দিয়েছেন: প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখা, চাশতের নামাজ আদায় করা এবং ঘুমানোর আগে বিতর পড়া।"
(সহিহ বুখারি: ১১৭৮; সহিহ মুসলিম: ৭২১)
3. চাশতের সময়:
রাসুল (সা.) বলেন,
> "যখন সূর্য উত্তাপিত হয় (অর্থাৎ সকাল ১০টা থেকে দুপুরের আগে), তখন দোহা নামাজ আদায় করা হয়।"
(সহিহ মুসলিম: ৭৪৮)
4. দোহা নামাজের রাকাত সংখ্যা:
রাসুল (সা.) বলেন,
> "যে ব্যক্তি দিনে ১২ রাকাত দোহা নামাজ পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর প্রস্তুত করেন।"
(সুনান তিরমিজি: ৪৭৩)
চাশতের নামাজের সময়
চাশতের নামাজ ফজরের নামাজ ও সূর্যোদয়ের পর থেকে শুরু হয় এবং জোহরের সময়ের আগে পর্যন্ত তা আদায় করা যায়।
শুরুর সময়: সূর্যোদয়ের প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর।
শেষ সময়: জোহরের সময় শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট আগে।
সর্বোত্তম সময় হলো সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত, যখন সূর্যের তাপ স্পষ্ট হয়।
রাকাত সংখ্যা
চাশতের নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো রাকাত সংখ্যা নেই। তবে হাদিস থেকে বোঝা যায়:
সর্বনিম্ন: ২ রাকাত।
সর্বোচ্চ: ১২ রাকাত।
রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণত ৪ রাকাত অথবা ৮ রাকাত আদায় করতেন।
চাশতের নামাজের ফজিলত
1. পাপ মোচন:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
> "যে ব্যক্তি নিয়মিত দোহা নামাজ আদায় করবে, তার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মতো হয়।"
(সুনান তিরমিজি: ৪৭৬)
2. রিজিক বৃদ্ধির মাধ্যম:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
> "সকালবেলার দুই রাকাত নামাজ (চাশত) রিজিকের বরকতের কারণ হয়।"
(সহিহ মুসলিম: ৭২০)
3. জান্নাতে ঘর প্রস্তুত:
দোহা নামাজ পড়ার মাধ্যমে জান্নাতে একটি বিশেষ ঘর পাওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
চাশতের নামাজের আদায় পদ্ধতি
1. নিয়ত:
নিয়মিত নফল নামাজের মতোই।
অন্তরে চাশতের নামাজের জন্য নিয়ত করলেই যথেষ্ট।
2. পদ্ধতি:
প্রতিটি রাকাতে সুরা ফাতিহার পর একটি করে সুরা পড়া।
নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
উপসংহার
চাশতের নামাজ একটি বিশেষ নফল ইবাদত, যা বান্দার ঈমান বাড়ায় এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। এটি পাপ মোচন, রিজিক বৃদ্ধি এবং জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন ও হাদিসের আলোকে চাশতের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অত্যন্ত স্পষ্ট, এবং মুসলিম জীবনে এটি নিয়মিত একটি অভ্যাসে পরিণত করা উচিত।
Comments
Post a Comment