সালাতুল আশুরা কি? কত রাকাত? ফজিলত ও আদায়ের পদ্ধতি কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্লেষন কর। লেখকঃ মোঃ ফিরোজ কবির।

 সালাতুল আশুরা একটি বিশেষ নফল নামাজ যা মহররম মাসের দশম দিন (আশুরা) আদায় করা হয়। ইসলামী ঐতিহ্যে আশুরার দিন রোজা রাখা এবং ইবাদত-বন্দেগিতে অধিক মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। তবে সালাতুল আশুরার জন্য নির্দিষ্ট কোনো নামাজের বিধান কুরআন ও সহীহ হাদিসে পাওয়া যায় না। এটি নফল ইবাদতের আওতায় পড়ে, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে আদায় করা হয়।


আশুরার গুরুত্ব কুরআন ও হাদিসে

মহররম মাস এবং আশুরার দিন সম্পর্কে আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ:

  1. কুরআনে মহররমের মর্যাদা:

    "নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট মাস গণনায় বারো মাস, যা আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে চারটি হলো পবিত্র মাস।"
    — (সুরা তাওবা, ৯:৩৬)
    মহররম এই চার পবিত্র মাসের একটি।

  2. হাদিসে আশুরার ফজিলত:

    • রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

      "আমি আল্লাহর উপর ভরসা করি যে, আশুরার রোজা পূর্ববর্তী বছরের গুনাহসমূহ মুছে ফেলবে।"
      — (সহীহ মুসলিম: ১১৬২)

    • এটি এমন একটি দিন, যেদিন আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.) এবং বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছিলেন।


সালাতুল আশুরার ফজিলত

যদিও সরাসরি সালাতুল আশুরার জন্য কোনো সহীহ হাদিস নেই, তবুও নফল নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং এই দিনে ইবাদত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ:

  1. নফল ইবাদতের মাধ্যমে পুণ্য অর্জন:

    "আমার বান্দা তার নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার কাছে এতটা আসে যে, আমি তাকে ভালোবাসি।"
    — (সহীহ বুখারি: ৬৫০২)

  2. আশুরার দিনে বিশেষ ইবাদত:
    সাহাবীদের জীবনেও দেখা যায়, তাঁরা আশুরার দিন বেশি বেশি ইবাদত করতেন।


রাকাত সংখ্যা

সালাতুল আশুরার জন্য নির্দিষ্ট কোনো রাকাত সংখ্যা নেই। সাধারণত ২, ৪ বা ৮ রাকাত নফল নামাজ পড়া যেতে পারে।


আদায়ের পদ্ধতি

সালাতুল আশুরা আদায়ের পদ্ধতি নফল নামাজের সাধারণ নিয়ম অনুসারে হতে পারে:

  1. নিয়ত করুন: মনে মনে বলুন, "আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আশুরার দিনে নফল নামাজ পড়ছি।"

  2. ২ রাকাত করে নামাজ আদায় করুন:

    • সুরা ফাতিহার পর যেকোনো সূরা পড়ুন। উদাহরণস্বরূপ:
      • প্রথম রাকাতে সুরা ইখলাস।
      • দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফালাক বা সুরা নাস।
  3. দীর্ঘ সিজদা করুন: সিজদায় গিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও বিশেষ দোয়া করুন।

  4. ইস্তিগফার ও দরুদ শরিফ পড়ুন: নামাজ শেষে অন্তত ১০ বার ইস্তিগফার এবং দরুদ শরিফ পড়ুন।

  5. আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন: নিজের, পরিবার এবং মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে বিশেষ দোয়া করুন।


উপসংহার

সালাতুল আশুরা সরাসরি কোনো বাধ্যতামূলক বা নির্দিষ্ট নামাজ নয়। এটি নফল ইবাদতের আওতায় পড়ে। মহররমের ১০ তারিখে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য নফল নামাজ, দোয়া, এবং রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। আশুরার দিনে বেশি বেশি ইবাদত করা এবং আত্মশুদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা মুসলিম জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

Comments

Popular posts from this blog

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শৈশব ও কৈশোর শৈশবকাল। লেখক মোঃ ফিরোজ কবির।

বিষয়ঃ বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে রাসুল (সা:) এর আদর্শ। লেখক মোঃ ফিরোজ কবির

হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর স্ত্রীদের নামসমূহ। লেখক- মোঃ ফিরোজ কবির।