সালাতুল তওয়াফ কি? কত রাকাত? ফজিলত ও আদায়ের পদ্ধতি কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্লেষন কর। লেখকঃ মোঃ ফিরোজ কবির।

 সালাতুল তওয়াফ এমন একটি নামাজ যা তওয়াফ সম্পন্ন করার পর আদায় করা হয়। এটি হজ ও ওমরাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত অংশ এবং এটি সরাসরি কুরআন ও হাদিসে প্রমাণিত। তওয়াফ করার পর দুই রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, যা তওয়াফের নামাজ নামে পরিচিত।


সালাতুল তওয়াফের ফজিলত

তওয়াফ এবং তার পর আদায়কৃত এই নামাজ ইসলামের বিশেষ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। এর ফজিলত হলো:

  1. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন:

    • কাবার তওয়াফ আল্লাহর ঘরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাঁর আনুগত্যের প্রকাশ। তওয়াফ শেষে সালাত আদায় করে আল্লাহর কাছ থেকে আরও রহমত ও বরকত প্রত্যাশা করা হয়।
  2. সালাত আদায়ের নির্দেশ:
    হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

    "যখন কেউ তওয়াফ করে, তখন সে যেন তওয়াফ শেষে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে।"
    — (সহীহ বুখারি: ১৬১৬; সহীহ মুসলিম: ১২১৮)

  3. গুনাহ মাফ ও আত্মশুদ্ধি:
    তওয়াফ ও এর নামাজ গুনাহ মাফের একটি মাধ্যম। এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ তৈরি করে।


রাকাত সংখ্যা

সালাতুল তওয়াফ ২ রাকাত নামাজ। এটি তওয়াফ শেষ হওয়ার পর আদায় করা সুন্নত।


আদায়ের পদ্ধতি

সালাতুল তওয়াফ আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়:

  1. তওয়াফ সম্পন্ন করুন:

    • তওয়াফের সাত চক্কর সম্পন্ন করার পর হাত তুলে দোয়া করুন এবং মাকামে ইবরাহিমের পেছনে গিয়ে এই নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি নিন।
    • মাকামে ইবরাহিমের কাছে নামাজ পড়া সুন্নত। তবে ভিড় থাকলে মসজিদুল হারামের যেকোনো স্থানে এটি পড়া জায়েজ।
  2. নামাজের নিয়ত করুন:
    মনে মনে বলুন, "আমি তওয়াফের জন্য দুই রাকাত নামাজ পড়তে চাই।"

  3. ২ রাকাত নামাজ আদায় করুন:

    • প্রথম রাকাত: সুরা ফাতিহার পরে সুরা কাফিরুন পড়া উত্তম।
    • দ্বিতীয় রাকাত: সুরা ফাতিহার পরে সুরা ইখলাস পড়া উত্তম।
      (এটি সুন্নত; অন্য সূরা পড়লেও নামাজ সহীহ হবে।)
  4. সালামের পর দোয়া করুন:

    • আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং তাঁর নৈকট্য কামনা করুন।
    • হাদিসে উল্লিখিত বিভিন্ন তওবা ও ইস্তিগফারের দোয়া পড়তে পারেন।

বিশেষ নির্দেশনা

  1. যদি ভিড় থাকে:
    মাকামে ইবরাহিমের কাছে জায়গা না পেলে মসজিদুল হারামের যেকোনো স্থানে সালাতুল তওয়াফ পড়া যাবে।

  2. তওয়াফের জন্য রাত্রি ও দিনে সময়:
    তওয়াফের সময়সীমা নেই, তবে সালাতুল তওয়াফ ফজর ও আসরের নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যেকোনো সময় আদায় করা যায়।


উপসংহার

সালাতুল তওয়াফ কাবার তওয়াফ শেষে আদায় করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত নামাজ। এটি আল্লাহর ঘরের প্রতি বিনয় ও আনুগত্য প্রকাশের অন্যতম অংশ। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ নামাজ আদায় করতে উৎসাহ দিয়েছেন এবং এটি আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের মাধ্যম। তওয়াফ শেষ করে মনোযোগী হয়ে এই নামাজ আদায় করা মুমিনের ইমান ও আমলকে আরও শুদ্ধ করে।

Comments

Popular posts from this blog

মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শৈশব ও কৈশোর শৈশবকাল। লেখক মোঃ ফিরোজ কবির।

বিষয়ঃ বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে রাসুল (সা:) এর আদর্শ। লেখক মোঃ ফিরোজ কবির

হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর স্ত্রীদের নামসমূহ। লেখক- মোঃ ফিরোজ কবির।